প্রিয়ার চোখে জল

প্রিয়ার চাহনি (মে ২০১২)

বিষণ্ন সুমন
  • ৩৯
  • ২৮
মানুষটা সুন্দর। অসম্ভব সুন্দর। দেখলেই শুধু তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে। কি রকম দেবদূতের মত শান্ত সৌম্য চেহারা। এরকম একজন মানুষকে আর কিছুক্ষণ পরেই এই পৃথিবীর মায়া ছেড়ে যেতে হবে ভাবতেই কেমন জানি লাগছে। কিন্তু মানুষটার সেটা নিয়ে কোন ভাবনা আছে বলে মনে হচ্ছে না। কাঠের খটখটে চৌঁকিতে কিরকম পরম নিশ্চিন্তে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। যে কেউ দেখলে ভাববে ঘুমাচ্ছে। কিন্তু, তিনি ভাল করেই জানেন মানুষটা ঘুমিয়ে নেই। এ অবস্থায় কেউ ঘুমাতে পারে না।

কনডেম সেলের গরাদের ফাঁক দিয়ে নির্ণিমেষ তাকিয়ে আছেন জেলার সাহেব। ভেতরে শুয়ে থাকা মানুষটা তার জন্য একটা বিরাট রহস্য। তার এত বছর চাকুরী জীবনে এমন আর একজন মানুষকে আসামী হিসেবে পাননি, যার সম্পর্কে অনেক চেষ্টা করেও কিছুই জানতে পারেননি। মানুষটা এখানে আসার পর থেকেই মুখে পুরোপুরি তালা মেরে আছেন।

অবশ্য যে অপরাধে তাকে এমনতর কঠিন সাজা পেতে হচ্ছে, তাতে মুখ খুললেও কেউ শুনতো কিনা সন্দেহ। নিজের স্ত্রীর ছোট বোনকে যে লোক রেপ করতে গিয়ে খুন করে ফেলে তাকে অবশ্যই নুন্যতম ছাড় দিতে কেউ রাজী হবেনা সেটাই স্বাভাবিক। তবুও আত্নপক্ষ সমর্থন বলে একটা ব্যপার আছে। কিন্তু সরকার পক্ষের কৌশুলীর শত জেরার মুখেও যে লোক টু শব্দটি করেনি, নিজের স্ত্রী'ই যেখানে চাক্ষুষ সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত, সেখানে ঘটনাটাকে অন্যরকম ভাবার কোন অবকাশ ছিল না। যারই ফলশ্রুতিতে ত্বরিৎ বিচার ব্যবস্থা গ্রহন এবং তৎপর এই ফাঁসির হুকুম যা আর কিছুক্ষণের মধ্যেই কার্যকর হতে যাচ্ছে। কিস্তু জেলার সাহেবের মন বলছে, কোথাও কোন ভুল হচ্ছে। তার অবচেতন মন কিছুতেই এই ফাঁসির রায় কার্যকর করতে সায় দিচ্ছে না। তবুও কর্তব্য পালনের তাগিদে তিনি নিজের আবেগকে বশে আনলেন। লম্বা করে একটা দম নিয়ে সেলের ভেতর পা রাখলেন। আস্তে করে এগিয়ে গেলেন চৌকিতে শুয়ে থাকা মানুষটার দিকে।

আলতো পায়ের শব্দে সচকিত হলেন মানুষটা। চোখ খুললেন। ঘরের ভেতর ছাদ থেকে ঝুলে থাকা নগ্ন বালব্টা মলিন আলো ছড়াচ্ছে। আলোটা সরাসরি চোখে পড়তেই মুখ ফেরালেন। মাথার কাছে জেলার সাহেবকে দেখে বুঝে নিলেন যা বুঝার।

চলুন সাইদ সাহেব। সময় হয়ে এসেছে। প্রবল অনিচ্ছাকে দূরে সরিয়ে কন্ঠটাকে যথাসম্ভব স্বাভাবিক রেখে কথা ক'টি উচ্চারণ করলেন জেলার সাহেব।

মানুষটার কোন ভাবান্তর হলো না। আস্তে ধীরে বিছানা থেকে উঠে বসলেন। খুব ধীর লয়ে পা দুটো বিছানা থেকে নামিয়ে মেঝেয় রাখলেন। সময় নিয়ে পায়ে চপ্পল গলালেন। হঠাৎ বুকের বাম দিকটা ডান হাত দিয়ে আলতো করে একটা চাপ দিয়েই আবার সরিয়ে আনলেন। জেলার সাহেবের বুঝতে বাকী রইলো না, তার আসামী এই অন্তিম মুহুর্তে আসলে স্বস্থিতে নেই। তিনি সাথের কনষ্টেবল দু'জনকে ঈশারা করতেই তারা তাকে ধরবার জন্য এগিয়ে গেল। কিন্তু আসামী হাত নেড়ে মানা করলেন। তার প্রতিটা মুভমেন্টে এটাই স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে এই চিরযাত্রার জন্য তার বিন্দুমাত্র চিন্তা নেই, এটা বুঝাবার জন্য তিনি আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। একসময় নিজেই শান্তভাবে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালেন। দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে গেলেন সেলের দরজার দিকে। বাধ্য হয়েই জেলার সাহেব ও কনষ্টেবল দু'জন তার পিছু পিছু এগিয়ে গেলেন। অবাক হয়ে তারা খেয়াল করলেন এরই মাঝে আরো একবার আসামী তার বুকের বাম দিকটা ছুঁয়ে এসেছে। দৃশ্যটা তাকে ভাবিয়ে তুললো।





ভোরের দিকে আকাশ তখনো তেমন ফর্সা হয়ে উঠেনি। হালকা অন্ধকারের বুক চিড়ে পুলিশ অ্যাম্বুলেন্সের তীর্যক আলোটা চোখে পড়তেই শশব্যাস্তভাবে জেল গেটের বাইরে বেঞ্চিতে বসে থাকা রুমানা উঠে দাঁড়ালো। স্রেফ পুলিশী ঝামেলা এড়িয়ে যাবার জন্যই সে সাইদের ডেডবডি রিসিভ করতে এসেছে। তা না হলে যে মানুষটা তার ছোট বোনকেই নয়, তার দীর্ঘ দিনের সযতনে রক্ষিত বিশ্বাষকেও খুন করেছে, বিচারে যার এই কিছুক্ষণ আগেই ফাঁসি হয়েছে, তার মরামুখ দেখার জন্য অন্ততঃ তাকে আসতে হবে, এমন কোন দায় পড়েনি তার। কিন্তু, উপায় ছিল না। জেলার সাহেব নিজে তাকে ফোন করে আসতে বলেছেন।

অ্যাম্বুলেন্সটা ঠিক তার সামনেই এসে দাঁড়িয়ে গেল। ড্রাইভারের পাশের সীট থেকে নেমে এলেন জেলার সাহেব। আপনি এসেছেন বলে আমি খুব খুশী হয়েছি। একটা ফাইল ধরিয়ে দিল রুমানার দিকে। প্রয়োজনীয় সব ঝামেলা সেরে রাখা হয়েছে। আপনি শুধু একটা সই করে দিন। বাকীটুকু আমরাই সামলে নেব।

রুমানার সই করা হলে ফাইল থেকে প্রয়োজনীয় কাগজটা সরিয়ে নিয়ে ওটা আবার তাকে ফিরিয়ে দিল। আপনি সামনের সীটে উঠে বসুন। এই অ্যাম্বুলেন্সই আপনাকে ডেডবডি সহ পৌঁছে দিয়ে আসবে।

রুমানা ড্রাইভারের পাশের সীটে উঠে বসতেই অ্যাম্বুলেন্স নড়তে শুরু করলো। ঠিক তখনি সে জেলার সাহেবের উচ্চকিত কন্ঠ শুনতে পেলো। ম্যাডাম ফাইলগুলোর ভেতরে সাইদ সাহেবের লিখা একটা চিঠি আছে। ওটা উনার বুক পকেটে ছিল। ফাঁসির রায় কার্যকর করার পর ওটা আমরা হাতে পেয়েছি। ওটা আগে পেলে হয়ত ...........। যাই হোক আমি চাই আপনি সেটা পড়বেন। মাইন্ড ইট, অবশ্যই পড়বেন।

জেলার সাহেবের শেষের বলা কথা ক'টি বেশ নাড়িয়ে দিল রুমানাকে। সাইদের চিঠি ! কি লিখা আছে ওতে ? কিন্তু, তাকে তো ও ঘৃনা করে। কাজেই তার লেখা চিঠির প্রতি তার কোন আগ্রহ নেই। থাকতে পারে না। এদিকে জেলার সাহেবই বা কেন ওকথা বললেন ? আর কেনইবা চিঠিটা পড়ার জন্য ওভাবে বলে দিলেন। ওটা আর যাই হোক অনুরোধের সুর ছিল না। শেষপর্যন্ত অনেকটা দোনামোনা করেই ফাইলের ভেতর হাত গলিয়ে দিল। চিঠিটা পেয়ে গেল সহজেই। চারপাশ ইতিমধ্যে বেশ ফর্সা হয়ে উঠেছে। তারই আলোয় চিঠিটা পড়তে শুরু করলো।





টুনা-টুনির সংসার বলতে যা বুঝায় সাইদ-রুমানার তাই। নির্বিবাদী শান্ত ভদ্র সাইদের জীবন বলতে কেবল অফিস আর বাসাকে ঘিরে। একটা বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের এক্সিকিউটিভ পদে কর্মরত ও। কোন আড্ডাবাজীতে নেই। মফস্বলের ছেলে। পড়াশোনায় সময়টা ঠিকমত দিতে পেড়েছিল বলে আজ এই চাকুরীর সুবাদে বউকে নিয়ে শহুরে জীবন কাটাতে পারছে। রুমানা নিজেও মফস্বলের মেয়ে। তাদের বিয়ে হয়েছে আজ প্রায় দু'বছর হতে চলল। এখনো ছেলে-পুলে নেওয়া হয়নি। নিজেদের অবস্থানটাকে আর একটু শক্ত-পোক্ত করে তবেই নেবার ইচ্ছে। তাই বলে তাদের জীবনে কোন আনন্দ নেই তা নয়। বেশ হেসে-খেলে কেটে যাচ্ছে তাদের জীবন। সুযোগ পেলেই তারা বাইরে বেড়াতে যায়। মাসে একবার অন্তঃত দেশের বাড়ীতে বাবা-মাকে দেখতে যায়। এরকম একজন মানুষকে জামাই হিসেবে পেয়ে খুব খুশী রুমানা। সমস্যা একটাই, সাইদ একটু বেশীমাত্রায় সুন্দর। তবে ওকে এদ্দিনে যা বুঝেছে, আর কোন মেয়ের দিকে ফিরে তাকাবার ছেলে নয় ও। তারপরেও এত সুন্দর একজন জামাইকে নিয়ে একটু আধটু টেনশন হয় বৈকি। কখন আবার কোন মেয়ে না তাকে নজর দিয়ে যায়।

ছোটবোন রিয়ানা যেদিন ভার্সিটিতে ভর্তি হবার জন্য ওদের বাসায় এল, সেদিন থেকেই হাব-ভাব বদলে গেল রুমানার। সারাক্ষণ রিয়ানাকে চোখে চোখে রাখতে লাগলো ও। তার কেবলি মনে হতে লাগলো এই বুঝি রিয়ানা তার জামাইয়ের দিকে নজর দিচ্ছে। অবশ্য তার কারণও আছে। মেয়ে হিসেবে তার থেকে বোনটা অনেক বেশী সুন্দরী। আর তাই কারণে-অকারণে রিয়ানাকে শাসন করা, সাইদের সাথে শ্যালিকা-দুলাভাইয়ের স্বাভাবিক খুনসুটিতে বাঁধ সাধা তার স্বভাবে দাঁড়িয়ে গেল। ব্যপারটা সাইদও খেয়াল করলো। আর তাই নিজেকেই বদলে নিল ও। যে কিনা সাড়াক্ষণ রুমানার সাথে দুষ্টুমিতে মেতে থাকতো, সেই হঠাত রাসভারী প্রবল ব্যক্তিত্বের মোড়কে নিজেকে ঢেকে ফেলল। এতে ব্যপার হলো আরো উল্টো। সন্দেহের তীর এখন সরাসরি তার দিকেই নিক্ষিপ্ত হতে থাকলো। একদিন রিয়ানার অনুপুস্থিতিতে কথাটা স্বামীকে বলেই ফেলল।

এই কি হয়েছে তোমার ?

অফিস থেকে সবে ফিরেছে সাইদ। রিয়ানা এখনো ভার্সিটি থেকে ফেরেনি দেখে অবাক হলো। ড্রেস চেঞ্জ করতে করতে উত্তর দিল, কই কিছু না তো। তা রিয়ানা এখনো ফেরেনি বুঝি ?

না ফিরলেই তোমার কি ? ও আমার বোন। কাজেই ও ফিরলো কি ফিরলো না, সেটা আমি বুঝবো। তা নিয়ে তোমার এত্ত মাথা ব্যথা কেন ?

বাহ্ তা থাকবে না ! দশটা নয়, পাঁচটা নয়, আমার একটাই মাত্র শ্যালিকা। আর তাও কিনা এখন আছে আমাদেরই বাসায়, কাজেই ওর সবদিকে তো আমারী খেয়াল করতে হবে। না কি ? মৃদু হেঁসে পরিবেশটাকে হালকা করার প্রয়াস পেল সাইদ।

তাই ! আমার তো ধারোনা, ওর এখন না থাকাটা তুমি মোটেও ভাল ভাবে মেনে নিতে পারোনি। এজন্য তোমার যে খুব খারাপ লাগছে, তাও বুঝতে পারছি। আসলে ও আসার পর থেকেই দেখছি, তুমি কেবল ওর'ই খোঁজ খবর নাও। অথচ আমার সাথে ঠিকমত কথাও বলো না।

মেয়েলী ঈর্ষায় জ্বলে-পুড়ে মরছে রুমানা বুঝলো সাইদ। তাই ওর এই অভিযোগের কোন উত্তর করলো না। এতে শুধু পরিবেশটাই গুমোট হবে। রিয়ানা এসে কিছু টের পাক সেটা তার ইচ্ছে নয়।

সে রাতে বাসায় ফেরার পর রিয়ানাকে তার বড় বোনের কাছ থেকে অযাচিতভাবে অনেক বাজে কথা শুনতে হলো যার কোনোটারই বিন্দুমাত্র ভিত্তি নেই। একই মায়ের পেটের বোন বলেই হয়তো স্বভাবে তাদের অনেক মিল। রুমানার এই অহেতুক খারাপ ব্যবহার তাকে ভীষণ রাগীয়ে দিল। তাই সে মনে মনে সিদ্ধান্ত নিল বড় আপার এই অমূলক সন্দেহকেই সত্য করে ছাড়বে। রুমানা যদি বুনো ওল হয় তো, তবে সেও বাঘা তেতুল। সেদিন থেকেই দেখা গেল, কারণে-অকারণে দুলাভাইয়ের সামনে ঘুরঘুর করা, হঠাত হঠাত কোনরকম নোটিশ ছাড়াই বুকের উপর থেকে ওড়না সরে যাওয়া, কিংবা চোখে চোখ পড়তেই সাইদের মুখপানে মন্ত্রমুগ্ধের মত তাকিয়ে থাকা, এরকম ব্যপার প্রায়ই ঘটতে লাগলো। তবে এসব'ই হতে থাকলো রুমানার চোখের আড়ালে। সবই বুঝলো সাইদ। কিন্তু এ নিয়ে রুমানা কিংবা রিয়ানা কাউকেই কিছু বললো না। অযথা সংসারে অশান্তি বাড়ানোর কোন মানে হয় না। এক্ষেত্রে নিজের বুদ্ধিমত্তাবলে পুরো বিষয়টাকেই ওভারলুক করে যেতে লাগলো। এতে ফল হলো আরো মারাত্নক। সাইদের এই নির্লিপ্ত আচরন রিয়ানাকে আরো জেদী করে তুললো। ব্যপারটাকে সে তার রমনীয় সৌন্দর্যের অপমান বলে ধরে নিল। অনন্যোপায় হয়ে সে আরো এগ্রেসিভ হয়ে উঠলো। ঠিক করলো পুরুষকে ঘায়েল করার একমাত্র মোক্ষম অস্ত্র তার শরীরটাকেই ব্যবহার করবে।





মাঝ রাত্তিরে হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেল সাইদের। তলপেটে প্রচন্ড চাপ অনুভব করায় দ্রুত বিছানা ছাড়লো। এটাচ্ড টয়লেটে ঢুকতে গিয়েও থেমে গেল। টয়লেটের আলো রুমে ঢুকলে ঘুম ভেঙ্গে যেতে পারে রুমানার। তার চেয়ে ওদিককার ডাইনিং এর পাশের টয়লেটে যাওয়াই সমিচিন ভেবে সেদিকে এগিয়ে গেল। ঠিক পাশের রুমেই নির্ঘুম শুয়ে থাকা রিয়ানা যেন এমন সুযোগের অপেক্ষাতেই ছিল। লাফিয়ে বিছানা ছাড়লো সে। দৌড়ে গেল টয়লেটের দিকে। ততক্ষণে ভেতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে সাইদ। ফলে তার নাগাল পেতে ব্যর্থ হলো। অগত্যা অপেক্ষা করতে থাকলো।

দরজা খুলে বেরুতে যাবে সাইদ এমনি সময় ঝড়ের বেগে ওকে ঠেলে নিয়ে টয়লেটের ভেতরে ঢুকে গেল রিয়ানা। কিংকর্তব্যবিমুঢ় সাইদ কিছু বুঝবার আগেই দু'হাতের শক্ত বাঁধনে জড়িয়ে নিল ওর শরীরটাকে। মুখের উপর ঠেসে ধরলো নিজের ঠোঁটজোড়া। বিব্রতকর পরিস্থিতিটা সামলে উঠে অনেক কষ্টে-সৃষ্টে রিয়ানার আগ্রাসী ছোবল থেকে নিজের মুখটাকে সারিয়ে নিল সাইদ।

ছিঃ রিয়া.....এসব কি করছ তুমি ..........! সবে বলতে শুরু করেছে এমনি সময় খুঁট করে তাদের বেডরুমের লাইট জ্বলে উঠলো। ব্যাপারটা রিয়ানাও খেয়াল করলো। মুহুর্তেই বুঝে নিল কি ঘটতে যাচ্ছে। তাই অবস্থা বুঝে সেও ভুমিকা বদলে নিতে সময় নিল না।

ছাড়েন দুলাভাই ! এসব কি করছেন আপনি ? মুখে বলছে বটে, কিন্তু ওদিকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে সাইদকে। মেয়েটার সহসা ভোল পাল্টানোতে চমকে গেল সাইদ। ওকে জোরসে জড়িয়ে ধরায় ওর উদ্দেশ্য বুঝতে সময় লাগলো না। এমনিতেই ওকে আর রিয়ানাকে নিয়ে আজে-বাজে চিন্তা রুমানার মাথায় খেলে বেড়ায়। এখন যদি এসে দেখে ওরা এমন করে জড়িয়ে আছে তবে যে কি হবে, বিষয়টা ভাবতেই বুকের ভেতরটা ঠান্ডা হয়ে গেল। না আর ভাবতে পারছে না। কাজেই ও দেখে ফেলার আগেই নিজেকে ছাড়াতে হবে। অগত্যা জোরাজুরি করতে লাগলো। কিন্তু রিয়ানার শরীরের মেয়েলী বাকগুলোর জন্য তেমন সুবিধা করে উঠতে পারলো না।

রিয়ানাও বুঝলো এভাবে সাইদকে বেশীক্ষণ আটকে রাখতে পারবে না। ওদিকে তার আপাও বুঝি এই চলে এল। অগত্যা নিজেকে কলংকমুক্ত রাখার সর্বশেষ চেষ্টা হিসেবে চিৎকার করতে গেল। কি ঘটতে যাচ্ছে সাইদও বুঝতে পারলো। রিয়ানা সবে মুখটা হাঁ করতে যাবে এমনি সময় সর্বশক্তি বলে তার ডান হাত দিয়ে ওর মুখ চেপে ধরলো। একই সঙ্গে বাম হাত দিয়ে চেপে ধরলো ওর গলা। এবার রিয়ানাও বিপদ বুঝে নিজেকে ছাড়াবার জন্য ধস্তাধস্তি শুরু করে দিল। কিন্তু সাইদের গায়ে ততক্ষণে আসুরিক শক্তি চলে এসেছে। তাই কিছুতেই পেড়ে উঠলো না।

ঝাড়া পাঁচ মিনিট রিয়ানাকে চেপে ধরে থাকলো সাইদ। ঠিক তখনি এসে ওখানে হাজির হলো রুমানা। দৃশ্যটা দেখে হতভম্ব হয়ে গেল ও। একি হচ্ছে সাইদ ! নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে পারছে না । ছাড়ো ওকে বলছি। প্রায় চিৎকার করে উঠলো।

রুমানার চিৎকারে সম্বিত ফিরে পেল সাইদ। ঝাটকা দিয়ে রিয়ানাকে ছেড়ে দিল। কাটা কলা গাছের মত মেয়েটার নিথর দেহটা আলগোছে নীচে পড়ে গেল। দৌড়ে গিয়ে বোনকে জাপটে ধরলো রুমানা। বারকয়েক দেহটা ধরে ঝাঁকি দিল। রাবারের পুতুলের মত শরীরটা নড়ে উঠলো শুধু। কোন সাড়া দিল না। নিমেষেই যা বুঝার বুঝে নিল। রিয়ানার মুখের দু'কষা বেয়ে লালা গড়িয়ে পড়ছে অবিরত। ওর উল্টানো চোখ বলে দিচ্ছে, এ পৃথিবীর মায়া ছেড়ে গেছে ও ইতিমধ্যে।

হিস্টিরিয়া রোগীর মত লাফিয়ে সাইদের দিকে ফিরলো রুমানা। ওর দু'কাধ ধরে ঝাঁকাতে লাগলো। ক্রমাগত বকে যাচ্ছে। শয়তান, খুনী, ধোকাবাজ। এই ছিল তোমার মনে। ও..ও... ওকে তুমি মেরে ফেললে !

রুমানার চোখের দিকে নিষ্পলক তাকিয়ে আছে সাইদ। জানে ও চোখে এখন আর নিজেকে খুঁজে লাভ নেই। তাই সে কোন উত্তর করলো না। ষ্পষ্টতঃ বুঝতে পারলো, ওই চোখের চাহনীতে তার জন্য এখন নিখাদ ঘৃনা ছাড়া আর কিছুই নেই।





..... ভালোবাসি । বড় ভালোবাসি তোমায়। সেদিনের সেই ঘটনার পর তোমার চোখের চাহনী বদলে যেতে দেখেই আমি বুঝেছি আমি তোমার ভালবাসা হারিয়েছি। আর তখনি বুঝেছি মরন হয়েছে আমার। কি লাভ হতো তোমায় সব খুলে বলে। তুমি তো বিশ্বাস করতে না। চর্ম চোখের দৃষ্টিতে যা দেখেছো, মনের চোখের কোন বিচারে তুমি তাকে ভুল ঠাওরাতে ? আর তাই তুমি থেকে শুরু করে বিচারের কাঠগড়ায় সর্বত্রই আমি নিরুত্তর থেকেছি। বলতে পারো তোমাদের সাজানো বিচারের আদলে আমি আসলে আত্নহত্যা করেছি। কারণ আমি ভাল করেই জানি, আমার মৃত্যুই কেবল পারে তোমার ঘৃনার চোখে আবারো আমার জন্য ভালবাসা ফিরিয়ে দিতে। আমার জন্য যেদিন তুমি কাঁদবে, সেদিন জানবে ওপার থেকে আমি হাসছি আবারো তোমার ভালোবাসা পেয়েছি বলে।

আস্তে করে চিঠিটা ভাঁজ করলো রুমানা। কি মনে করে ওটাকে বুকে চেপে ধরলো। ততক্ষণে ওর দু'চোখ বেয়ে অঝোর ধারায় জল নেমে এসেছে। সেই জলের প্রতিটি কনায় লুকিয়ে আছে ভালোবাসা, শুধুই ভালোবাসা।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
জাকিয়া জেসমিন যূথী চমৎকার গল্প। আসলে পৃথিবীর নিয়মই এই। আসল নকল যায় না চেনা!! এক বছরেরও বেশি সময় পরে পড়া হলো গল্পটা। ভালো গল্পের আবেদন কখনোই ফুরায় না, সুমন ভাই।
এ কে এম মাজহারুল আবেদিন আমি সরাসরি বলতে চাই.... এই লেখাটি এই সংখ্যার সবচে অসাধারণ লেখা | যদি এই লেখাটি টপ লেখা না হয়, তাহলে বুঝব,লেখার দক্ষতা বুঝবার মন আমাদের পাঠকদের এখনো তৈরী হয়নি | হ্যাটস অফ টু ইউ সুমন ভাই | এই পুরো সংখ্যাতে এই গল্পের মত একটি লেখাও আমি পাইনি |
রওশন জাহান শক্তিশালী কবি বলব নাকি লেখক ! দুই বিভাগেই যে পারদর্শী তাদের জন্য আলাদা একটা উপাধি থাকা দরকার । গল্প বা কবিতায় আপনার বাহুল্যতা বর্জিত সহজ বোধ খুব ভাল লাগে ।
মোঃ শামছুল আরেফিন যত্ন নিয়ে পড়েছি গল্পটি। চমৎকার আইডিয়া। ভাললাগার সকল উপাদান ছিল। তবুও গল্পের মাঝখানে হঠাৎ করে একটু একঘেয়েমি ভাব চলে এসেছিল। তবে শেষ পর্যন্ত পড়ে মুগ্ধ হয়েছি ভাইয়া। শেষ প্যারাটা অসাধারণ ছিল। কিছু সত্য কখনো মিথ্যে যায়, আবার কিছু মিথ্যা সত্য হয়ে জিবনকে করে তোলে বিভীষিকাময়। এই চরম সত্যটি আপনি তুলে ধরেছেন আপনার গল্পে। খুব ভাল লেগেছে ভাইয়া গল্পটি।
খোরশেদুল আলম গল্পের দৃশ্যগুলো চোখের সামনে স্পষ্ট ভাবে ভেসে উঠছে। চমৎকার ফুটেছে তিনটি চরিত্র। বরাবরের মতো মুগ্ধ হলাম আপনার গল্পে। শুভ কামনা সুমন ভাই।
মাহবুব খান অনেক ভালো / ৫ দিলাম
আরমান হায়দার আমার ধারনা ছিল প্রিয়ার চাহনি সংখ্যার সব লেখা পড়ে ফেলছি। কিন্তু এত সুন্দর প্লট নিয়ে লেখা সুন্দর একটি গল্পই পড়া হয়নি। অতএব আমার ধারনা সঠিক নয়। সব লেখাই পড়া হয়নি। পঠিত-অপঠিত নির্বাচনের ম্যাকানিজমটি কাজ করছে না, সেটা যেমন দুঃখের বিষয় তার চেয়েও খারাপ বিষয় হল বহু চেষ্টার পরও অনেকের লেথা হয়তো অপঠিতই থেকে যাচ্ছে। যা হোক চমৎকার একটি গল্প পড়লাম --- এই শেষবিকেলে এসে।
মৃন্ময় মিজান বেশ সুন্দর করে সাজিয়েছেন গল্পটি। দারুণ লাগল। অনেক অনেক শুভকামনা আপনার জন্য।
সালেহ মাহমুদ আপনি যে কত বড় কথাশিল্পী তা বোধহয় আপনি নিজেও জানেন না। এ রকম অসাধারণ গল্প ক'জন লিখতে পারে বলুন। গল্পের থিম, নাটকীয়তা আর বর্ণনার অসাধারণত্ব আমাকে মোহিত করেছে। ধন্যবাদ আপনাকে।
আহমাদ ইউসুফ অসাধারণ একটা গল্প. মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে গেলাম. ধন্যবাদ আপনাকে. ভালো থাকবেন.

২৪ জানুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৭০ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“জানুয়ারী ২০২৫” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ জানুয়ারী, ২০২৫ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী